Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১০ জুলাই ২০২৫

বিক্ষোভ দমনে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা - বিবিসি আই’র অনুসন্ধান


প্রকাশন তারিখ : 2025-07-10

বাংলাদেশে গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভে যেভাবে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানো হয়, তা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে হয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন। বিবিসি আই একটি ফোনালাপের অডিও বিশ্লেষণ করেছে, যাতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই ওদের (বিক্ষোভকারী) পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে”। ৯ জুলাই বুধবার  এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওই ফোনালাপ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন এবং অনুপস্থিত অবস্থায়ই তার বিচার চলছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে সহিংস ওই বিক্ষোভে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যদিও হাসিনা ও তার দল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অডিওটি “অবৈধ কোনো মনোভাব” প্রমাণ করে না এবং তাদের মতে এটি ছিল “প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া”। ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই তারিখে রেকর্ড হওয়া একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলছেন, “প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।” বিবিসির যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” করার অনুমতি দিয়েছেন এবং “তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে”। ব্রিটিশ ফরেনসিক অডিও বিশেষজ্ঞ দল ইয়ারশট এবং বাংলাদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট -সিআইডি অডিওটি পরীক্ষা করে অবিকৃত এবং বিশ্বাসযোগ্য বলে নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অডিওটি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র -এনটিএমসি রেকর্ড করেছিল। ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন। তবে অডিওটি কে ফাঁস করেছে, তা নিশ্চিত নয়। গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে। পরে তা ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়, যার ফলে শেখ হাসিনাকে ১৫ বছরের ক্ষমতা হারাতে হয়। বিক্ষোভের চূড়ান্ত সহিংসতা ঘটে ৫ আগস্ট। সেদিন ঢাকার গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান হাসিনা। সেদিন শুধু যাত্রাবাড়ী এলাকায়ই পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ৩৬ দিনের আন্দোলনের সময়কার শত শত ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি। সিসিটিভি ফুটেজ, ড্রোন ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় তারা দেখিয়েছে, পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়, বিশেষত যেদিন সেনাবাহিনী এলাকা ছেড়ে যায়। মূলত জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানান খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিবিসি'র অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।